পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র রোববার, ২৫ জুন ২০২৩   পাকিস্তানের পাঞ্জাবের শিক্ষাবিদ, গবেষক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ড. মালিকা-ই-আবিদা খাত্তাক পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডেইলি টাইমসে ‘বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর গল্প: স্রেফ একটা সেতুর চেয়ে বড় কিছু?’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের স্বাক্ষর বহন করে পদ্মা সেতু। শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের সক্ষমতা আরও একবার জানার সুযোগ পেল বিশ্ব। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যারা বারবার তাদের সক্ষমতা দেখিয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ আন্তর্জাতিক পরিসরে বিনিয়োগ আসার জন্য একটি আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাইকি।বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সরকারের মেয়াদকালেই  যমুনা সেতুর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর কাজ সমাপ্ত করা হয়েছিল । গণমাধ্যমে কত রকম সংবাদ দেখছি ।  মিস্ইনফরশেশন , ডিসইফরমেশনে ছড়াছড়ি। কত রকম বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করতে দেখছি। এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া নাকি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন । যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু বিএনপি সরকারের কৃতিত্ব । অথচ যমুনা নদীর ওপর সেতু নিমার্ণের সময়কালের ৪৪ মাসের মধ্যে ২৪ মাস শেখ হাসিনার সরকার ছিল আর খালেদা জিয়ার সরকার ছিল ২০ মাসের । তাছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেললাইন ছিল না । শেখ হাসিনার সরকারের প্রথম  আমলেই বঙ্গবন্ধু সেতুর সেতুর মূল কাজ হয়েছে । এবং সেই সময়েই  শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের  সরকারের  সময়ে ১৯৯৮ সালে পদ্মায় সেতু নির্মাণের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমীক্ষা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালের ৪ জুলাই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় । তারপর জামাত -বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসে এবং স্বাভাবিক কারনে পদ্মা সেতুর কোনো অগ্রগতি হবে না এটাই ছিল স্বাভাবিক। সেই সরকার ছিল এটা প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকার । দেশের স্বার্থ এদের জন্যে বিবেচ্য বিষয় ছিল না । যেমন একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যাবে ।২০০০ সালে  শেখ হাসিনার  সরকারের  সময়ে কম্পিউটার ক্রয় সংক্রান্ত  বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ড সরকারের মধ্যে একটি  চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল  ।  চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডাচ সরকার টিউলিপ কম্পিউটারকে কম্পিউটার সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের কাজ দেয়। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করে প্রতিষ্ঠান। সরকার পরিবর্তন হওয়ায় এটা মন্ত্রিসভায় এসেছিল  পুন:অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতার জন্য। সাধারণত: সরকার পরিবর্তন হলেও এ ধরনের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অটুট থাকে। কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘টিউলিপ কম্পিউটার্স’ নাম শোনা মাত্র বেগম জিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন । তিনি বললেন, এই চুক্তি বাতিল করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষাসচিব বললেন ‘নেদারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তিশালী সদস্য। বছরে দেশটি বাংলাদেশকে ৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়।’ প্রধানমন্ত্রী রেগে গিয়ে বললেন ‘এই চুক্তি বাতিল করতেই হবে।’ একথা বলেই তিনি ক্যাবিনেট মিটিং থেকে উঠে গিয়েছিলেন ।‘টিউলিপ’ শেখ রেহানার মেয়ের নাম। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কেন কম্পিউটার কিনতে হবে?’ যদিও আদতে বিষয়টি তা নয়। টিউলিপ নেদারল্যান্ডের একটি কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান। এর জন্ম ১৯৭৯ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেখ রেহানা বা তাঁর পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই। এই চুক্তি বাতিল করলে বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ছিল। টিউলিপ লিমিটেড বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চাইলো। কিন্তু আবার বেঁকে বসলেন বেগম জিয়া, তিনি বললেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে না। টিউলিপ লিমিটেড মামলা করেছিল । আদালত বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল । কোর্টের আদেশও মানেননি বেগম খালেদা জিয়া। এরপর আন্তর্জাতিক আদালত বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডের সহায়তা বন্ধের আদেশ দিল। বন্ধ হয়ে গেলো ডাচ অনুদান ও সহায়তা। তাছাড়াও বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন প্রকল্প থেকেও নেদারল্যান্ড সরকারের সাহায্য সহযোগিতা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । হিসেব মতো  বাংলাদেশের শিশু ও নারীরা ৫৬৭ কোটি টাকার সাহায্য থেকে বঞ্চিত হলো। অতএব বার বার দেখা গেছে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করতে বিএনপি দেশবিরোধিতায় সামিল হয়ে যায় । ১৯৯৬ -২০০১ মেয়াদে পদ্মাসেতুর ভিত্তি প্রস্তর নির্মাণের পর ২০০১ সালে ১ লা অক্টোবর নির্বাচনে জামাত বিএনপি ক্ষমতায় আসে ।   পদ্মা সেতু  সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে।  ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংক সেতু নির্মাণে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে নতুন করে আশা জাগে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় ষড়যন্ত্র ও বিশ^ব্যাংকে দেয়া অভিযোগ। এ সময় বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের নির্মাণকাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন কানাডার একটি কোম্পানি এসএনসি-লাভালিন’র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে। এর আলোকে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। ফলে আবারও ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়ে সেতুর ভবিষ্যৎ। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকসহ একাধিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা চুক্তি স্থগিত করে।যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি) ২০১২ সালের ৩০ জুন এক খবরে উল্লেখ করে, ‘বিশ্বব্যাংক বলছে, সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা, কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি ব্যক্তিদের মধ্যে যোগসাজশে বিভিন্ন সূত্র থেকে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে। এসব তথ্য-প্রমাণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, (তৎকালীন) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে দেয় হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে এসব তথ্য-প্রমাণ দেয়া হয়।’তবে বিশ্বব্যাংকের এসব অভিযোগ প্রথম থেকেই প্রত্যাখ্যান করেছিল বাংলাদেশ।


 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

মাটি ও মানুষের জন্য প্রতি মুহূর্তে দেশকে জানাতে এম টিভি আছে আপনার পাশে।

দেশ মাটি ও মানুষের কথা বলে এম টিভি, প্রিয় দর্শক আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানের জন্য যোগাযোগ করুণ